নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ হাজার প্রধান শিক্ষকের জন্য যেন হঠাৎই উঁকি দিল এক নতুন সকাল। দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, অপেক্ষা আর আইনি লড়াই শেষে অবশেষে আলো দেখছেন তারা। কারণ, তাদের বেতনস্কেল ১১তম গ্রেড থেকে উন্নীত হয়ে ১০ম গ্রেডে যাওয়ার পথ এখন প্রায় নিশ্চিত। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিষয়টি এখন সক্রিয়ভাবে বিবেচনাধীন।
৫ জুলাই, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মোহাম্মদ কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত একটি পত্রে এই আশার বার্তা পৌঁছায় মাঠপর্যায়ে। এতে উল্লেখ করা হয়, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী রিটকারী ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতনস্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নীত করতে অর্থ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে সম্মতি দিয়েছে। আর বাকি প্রধান শিক্ষকদের বিষয়টিও সরকার গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।
পুরনো দাবি, নতুন আশ্বাস
বছরের পর বছর ধরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা তাদের মর্যাদার উপযুক্ত গ্রেডের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। তাদের দাবি ছিল স্পষ্ট—একই দায়িত্ব, অথচ ভিন্ন গ্রেড কেন? ২০১৪ সালে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার মর্যাদা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েও, পরে প্রশিক্ষিত ও অপ্রশিক্ষিত হিসেবে বিভাজন করে ১১ ও ১২তম গ্রেড নির্ধারণ করা হয়। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে রিট করেন রিয়াজ পারভেজসহ ৪৫ জন শিক্ষক।
২০১৯ সালে উচ্চ আদালত তাদের পক্ষে রায় দেয়, যা আপিল বিভাগ পর্যন্ত টিকে যায়। সরকারের সব আইনি চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর এখন সেই রায়ের আলোকে বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে সরকার।
সম্মানের সাথে ফিরে পাওয়া অধিকার
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। সভাপতি মো. আবুল কাশেম বলেন,
"এই সিদ্ধান্ত শুধু বেতন বা গ্রেডের নয়, এটি আমাদের মর্যাদার প্রশ্ন। আমরা কৃতজ্ঞ, সরকার অবশেষে আমাদের কথা শুনেছে। তবে আমরা চাই, রিটকারী ৪৫ জন নয়, দেশের প্রতিটি প্রধান শিক্ষক যেন এই সুযোগ পান।"
সাথেই তিনি সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেন।
চাঁদাবাজির ফাঁদে সতর্ক বার্তা
দুঃখজনক হলেও সত্য, কিছু অসাধু মহল এই প্রক্রিয়াকে ঘিরে চাঁদাবাজিতে জড়িয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই বিষয়ে অধিদপ্তর একটি সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছে—কোনো আর্থিক লেনদেন না করতে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানাতে।
প্রধান শিক্ষকরা যেন দালালের ফাঁদে না পড়েন—এটি নিশ্চিত করতেই এ ধরনের পদক্ষেপ বলে জানান অধিদপ্তরের পরিচালক কামরুল হাসান।
তিনি বলেন,
"আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই—এই প্রক্রিয়ায় কোনো আর্থিক লেনদেনের সুযোগ নেই। সরকার ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বিষয়টি বিবেচনা করছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি হবে।"
শেষ কথা নয়, শুরু হতে যাচ্ছে একটি নতুন অধ্যায়
এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি প্রশাসনিক নির্দেশ নয়, এটি যেন মাঠের প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা হাজারো প্রধান শিক্ষকের সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার এক প্রতিশ্রুতি। এটি প্রমাণ করে, ধৈর্য, ঐক্য এবং ন্যায়ের পথে লড়লে জয় আসে—যদিও সময় লাগে।
এখন প্রশ্ন একটাই—এই আশার আলো কত দ্রুত বাস্তবতার আলো হয়ে পৌঁছাবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সেই স্কুলঘরগুলিতে, যেখানে একটি গ্রেড নয়, একজন প্রধান শিক্ষক প্রতিদিন নিজেকে প্রমাণ করেন শত চ্যালেঞ্জের মধ্যেও।
এম,আর,এ/
নিউজটি আপডেট করেছেন : Jatiyo Potrika
প্রাথমিকের ৩০ হাজার প্রধান শিক্ষক পাচ্ছেন ১০ম গ্রেডের বেতন
- আপলোড সময় : ০৬-০৭-২০২৫ ১১:০৭:৩৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৬-০৭-২০২৫ ১১:০৭:৩৭ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ